পূর্বমেদিনীপুর.ইন : রক্তদান শিবির মানেই ম্যারাপ বেঁধে রঙিন মঞ্চ, রঙবেরঙের ফ্লেক্স, হাতে গোলাপ তুলে দেওয়া সহ আনুষ্ঠানিকতার বিভিন্ন অঙ্গ ভেসে ওঠে আমাদের চোখের সামনে। কিন্তু শুধুমাত্র রক্তদানের ইচ্ছে থাকলেই যে দলে দলে রক্ত দেওয়া যায় তা বোধহয় কখনও ভেবে দেখেননি কেউ।
এই প্রথাগত রক্তদান শিবিরের ধারনা বদলে দিতে এবার ময়দানে নামল মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির একঝাঁক তরতাজা যুবক যুবতী (বয়সে নয়, মননে)। প্রচন্ড গরমে শুধুমাত্র রক্তদানের ইচ্ছে নিয়েই যারা মূল্যবান রক্তের প্যাকেট তুলে দিলেন সরকারী ব্লাড ব্যাঙ্কের হাতে।
সরকারী পরিভাষায় এমন রক্তদান হলো ইন হাউস রক্তদান। যেখানে নেই কোনো আড়ম্বর, নেই কোনো সংগঠনের ফ্লেক্স সহ আনুষ্ঠানিকতা বা ঘন ঘন অ্যানাউন্সমেন্ট। আর এতকিছু নেই দিয়েই এক অসাধারন রক্তদান শিবির আয়োজিত হয়ে গেল পূর্ব মেদিনীপুর তমলুক জেলা ব্লাড ব্যাংকে।
মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি আয়োজিত বুধবারের এই শিবিরে রক্ত দিলেন ১৭ জন রক্তদাতা। ফিরে গেলেন আরও ৬ জন। এটি ইন হাউস রক্তদান–এর তৃতীয় শিবির। ইতিপূর্বে মেদিনীপুর ও হলদিয়া ব্লাড ব্যাংকেও রক্তদান করেছেন যথাক্রমে ১২ জন ও ১১ জন রক্তদাতা।
সংস্থার প্রধান মৌসম মজুমদার জানান, “রক্তদান শিবির নিয়ে আর প্রলোভনের ফাঁদ পাতবো না। আজকে আমরা ভুল প্রমাণ করতেই নতুন লড়াই শুরু করেছি। এমন করোনা আবহে সবাই একরকম ভীত সন্ত্রস্ত।
এরকম পরিস্থিতিতে আমরা আশা ছাড়িনি, এদিন ১৭ জন রক্ত দিলেন, ৬ জন ফিরে গেলেন।। বাধ্য হয়ে জুলাই মাসে আবারও একটি শিবির বুক করা হয়েছে ব্লাড ব্যাংকে।
সংস্থার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ প্রসাদ ঘড়া জানান, ” এতদিন বাবা মা‘কে লুকিয়ে ছাত্র–ছাত্রীরা সিনেমা দেখতে যেত। আজ অন্য ছবি দেখলেন সবাই। এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাবা মা কে না জানিয়ে লুকিয়ে রক্তদান করে গেল, আমাদের চোখ খুলে দিয়ে গেল, সমাজের কাছে এক নতুনবার্তা দিয়ে গেল, যুব সমাজের মানসিকতা বদলে যাচ্ছে, উপহারের জন্য তারা রক্ত দেয় না। ওদের জন্য টুপি খুলে রাখলাম আমরা সবাই”।
তিনি আরও বলেন আজ সবচেয়ে বড় কথা, ১৭জনের মধ্যে ৩ ইউনিট রক্ত তমলুক হাসপাতালের ৩ জন রোগীর পরিবারকে তুলে দেওয়া হয়েছে ব্লাডব্যাংকের মাধ্যমে। আমাদের এই লড়াইয়ে তাদের পরিবার আগামীদিনে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন ফোন নম্বর দিয়ে।
আজ অবশ্য রক্তদাতাদের সবাইকে আমাদের জেলার সংগীত শিল্পী জয়দীপ চক্রবর্তীদার জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটা করে L40 পেয়ারা গাছ উপহার দেওয়া হলো। সংস্থার সম্পাদক সবার কাছে এক বার্তা দিলাম আপনারাও রক্তদানের এই কনসেপ্টটা গ্রহণ করুন, বিশেষ করে মার্চ থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে। আমাদের আগামী চতুর্থ ইনহাউস রক্তদান শিবির কাঁথিতে। তবে মনে রাখবেন নো গিফ্ট…. নো লাঞ্চ।