দীপক প্রধান, হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর : চূড়ান্ত জল যন্ত্রণার মধ্যে রাত কাটছে শিল্পাঞ্চল হলদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষদের। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির জমা জলে প্রায় এক পক্ষকাল কোথাও হাঁটু সমান জল তো কোথাও এক কোমর জলে ডুবে রয়েছে গোটা এলাকা। একই বাড়িতে সহাবস্থান করছে সাপ-মাছ-মানুষ। কিন্তু এই মানুষগুলোর পাশে দেখা যায়নি প্রশাসনের কোনও কর্তাব্যক্তিকেই। না পুরসভা, না জেলা বা মহকুমা প্রশাসন, না বিধায়ক, না সাংসদ। এর জেরে তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছেন জল যন্ত্রণায় ভুক্তভোগী মানুষেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই মুহুরতে হলদিয়া পুরসভার ২২, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শতাধিক মানুষের জীবন জমা জলেই আটকা পড়েছে। প্রায় ৯ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও জল নামার কোনও লক্ষণ নেই। ২৪নং ওয়ার্ডের হাতিবেড়িয়া পশ্চিম এলাকার গৃহবধূ অর্চনা জানা, জানান, এতদিন ধরে জলের মধ্যে আটকে রয়েছি আমরা। বাড়িতে রান্নাবান্না হচ্ছে না। কিন্তু কোনও জনপ্রতিনিধির দেখাই মিলছে না। কিভাবে মানুষগুলো বেঁচে আছেন তার খোঁজ নেননি কেউই।
আর এক গৃহবধূ স্বপ্না মাইতি জানান, “মাটির চালার বাড়িতে রয়েছি আমরা। ঘরের ভেতর এক হাঁটু জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মাছ, বিষধর সাপ। কোনওক্রমে প্রাণ হাতে নিয়েই বাড়ির খাটের ওপর উঠে বসে রয়েছি পরিবারের সবাই। রান্না খাওয়া নেই। এই জমা জলের দুর্ভোগ কবে মিটবে সে বিষয়ে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। গত ৩০ বছরে এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি” বলেই অভিযোগ তাঁর।
ইতিমধ্যে পুরসভার ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শ্রাবন্তী শাসমল এলাকা পরিদর্শনে গেলে তাঁকে ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসীরা। ক্ষুদিরাম নগরের বাসিন্দা শুভাশিষ মহাপাত্রের অভিযোগ, “কাউন্সিলারের ঘুম ভেঙেছে এক সপ্তাহ পরে। কিভাবে মানুষ বেঁচে আছেন, দু-বেলা খাওয়ার জুটছে কিনা তা দেখার সময় নেই। এতদিন বাদে তিনি এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন বলেই মানুষের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে” বলেই দাবী তাঁর।
তবে এই বিপদের সময় ত্রাতার ভূমিকায় গোটা পুর এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন হলদিয়া পুরসভার কাউন্সিলার এবং জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি আজগর আলি। প্রতিদিনই নিজের বিরাট দলবল নিয়ে তিনি ছুটে চলেছেন একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। একাধিক এলাকাতেই দু-বেলা রান্না করা খাওয়ার বিলি করছেন তিনি। আজগর জানান, “পুরসভার বহু এলাকা ডুবে রয়েছে জলের তলায়। শতাধিক পরিবার অভুক্ত দিন কাটাচ্ছে। তাই সাধ্যমতো বিভিন্ন এলাকায় দু’বেলা রান্না খাওয়ার বিলি চলছে”। তবে জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে কবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।