পূর্বমেদিনীপুর.ইন : প্রায় ১২ বছর বাদে রবিবার বেশ ঘটা করে খোলা হয়েছিল নন্দীগ্রামের সিপিএমের পার্টি অফিস। আর তার মাত্র ১ দিন বাদে সোমবার সেই পার্টি অফিসের লাল পতাকা কুলে সেখানে কালো পতাকা ঝুলিয়ে দিল জমি আন্দোলনকারী পরিবারেরা।
তাঁদের দাবী, জমি আন্দোলনের সময় কোথায় গায়েব হয়ে গেলেন নন্দীগ্রামের একাধিক মানুষ, কেন নিরীহ মানুষদের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে তার জবাব দিতে হবে। আর সেই জবাব না দেওয়া পর্যন্ত নন্দীগ্রামে কোনও লাল পতাকা লাগানো যাবে না।
যদিও এই ঘটনার পেছনে তৃণমূলের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখছেন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী সেক ইব্রাহিম। সোমবার সন্ধ্যে নাগাদ তিনি নন্দীগ্রাম থানায় গিয়ে এই মর্মে অভিযোগও দায়ের করেছেন।
পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে ইব্রাহিমের দাবী, এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট এলাকায় সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই। তাই পুলিশকে জানানো হয়েছে তাঁরা যেন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দেন। না হলে এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে যাবেন তাঁরা।
ইব্রাহিমের অভিযোগ, তৃণমূল কিছু মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে কালো পতাকা সহ পাঠিয়ে দিয়েছে সিপিএমের পার্টি অফিস দখল করার জন্য। এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী কালই নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বরা।
প্রসঙ্গতঃ ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশ অভিযানে একাধিক নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পর গোটা নন্দীগ্রাম জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষের রোষ গিয়ে পড়ে নন্দীগ্রাম বাজারের ওপর থাকা সিপিএমের জোনাল পার্টি অফিসের ওপর। এলাকাবাসীরা পার্টি অফিস ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সেই দিন থেকে অবহেলায় পড়ে ছল পার্টি অফিসটি। এবার নির্বাচনে নন্দীগ্রামে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া পার্টি অফিসটিকে খোলার চেষ্টা হয়েছে। এবং এখান থেকে নির্বাচনের কাজকর্ম করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু পার্টি অফিস খোলার ঘটনা জানাজানি হতেই নন্দীগ্রাম জুড়ে ক্ষোভ পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এদিন একাধিক মৃত ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে পার্টি অফিসে আসে। সেখান থেকে লাল পতাকাগুলি খুলে ফেলে তার জায়গায় কালো পতাকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
নন্দীগ্রামে নিহত সাউথখালির বাসিন্দা প্রলয় গিরির ভাই পলাশ গিরি, নিখোঁজ জমি আন্দোলনকারী সুব্রত সামন্তের স্ত্রী শ্রীমতি সামন্ত, নিখোঁজ সত্যেন গোল-এর স্ত্রী দুর্গারানী গোল প্রমূখরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের পরিবারের নিখোঁজ সদস্যরা কোথায় আছেন তার জবাব সিপিএমকে দিতে হবে।
যারা আজ পার্টি অফিস খুলতে আসছে তারা যতক্ষণ না নিখোঁজদের সন্ধান দেবে, যাদের আক্রমণে একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেই সমস্ত দোষীদের হাজির করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত পার্টি অফিসে লাল পতাকা লাগাতে দেওয়া হবে না।
নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূল নেতা আবু তাহের জানিয়েছেন, সিপিএমের অত্যাচারের কথা মানুষ আজও ভুলে যায়নি। এখনও বহু নিখোঁজের কোনও সন্ধান নেই। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এদিন। এবারের নির্বাচনে সিপিএম নন্দীগ্রামে একটিও ভোট পাবেন না বলেই দাবী তাঁর।
মোবাইলে আরও নিউজ আপডেট পেতে এইখানে ক্লিক করুন – Whatsapp