পূর্বমেদিনীপুর.ইন : মাছ চাষে গোটা দেশের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছে হলদিয়া। যার ফল স্বরূপ গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের সেরা মাছ চাষির বিভিন্ন বিভাগে সেরার পুরষ্কার ছিনিয়ে আনছেন হলদিয়া ব্লকের মাছচাষিরা। মূলতঃ নোনা ও মিষ্টি জলের বৈচিত্রময় মাছ চাষে গোটা দেশের নজর কেড়েছে হলদিয়া।
মাছ চাষে হলদিয়ার এমন অভাবনীয় সাফল্যের নিদর্শন তাই চাক্ষুষ করতে দু’দিনের সফরে এসেছেন এলেন ভূবনেশ্বরের অবস্থিত মিঠে জল মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, সিফা-র বিজ্ঞানী গবেষক দল। সোম ও মঙ্গলবার তাঁরা হলদিয়ায় বিভিন্ন মাছ চাষের ক্ষেত্রগুলিতে পর্যবেক্ষণ করেন।
২৫শে নভেম্বর সোমবার “সিফা”-র প্রধান বিজ্ঞানী হিমাংশু কুমার দে, বিজ্ঞানী সুভাষ সরকার সহ দুজন গবেষক এসেছেন। হলদিয়ার মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহু হলদিয়ার মাছের খামার গুলি ঘুরিয়ে দেখান।
তাঁদের স্বাগত জানান হলদিয়ার বিডিও তুলিকা দত্ত ব্যানার্জি, সভাপতি সুব্রত কুমার হাজরা, সহ সভাপতি সেখ সাইফুল, কর্মাধ্যক্ষ গোকুল মাঝি এবং হলদিয়ার মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহু।

হারিয়ে যাওয়া দেশীয় মাছ, মাগুর, শিঙ্গি, কই, পাবদা প্রভৃতি মাছের সফল বানিজ্যিক চাষ হচ্ছে হলদিয়ায়। হলদিয়ার মাছ চাষিরা রাজ্যে প্রথম বেশ কয়েকটি মাছের সফল চাষ করে নজর কেড়েছে। আমুর কার্প, পেংবা, জয়ন্তী রুই, গিফট তেলাপিয়া প্রভৃতি মাছের চাষ হচ্ছে হলদিয়ায়।
তাছাড়া “ফ্যামিলি ফার্মিং ফার্ম স্কুল” এর মাধ্যমে অভিনব প্রশিক্ষন পদ্ধতি এশিয়া মহাদেশে প্রথম হলদিয়া ব্লকে অনুষ্টিত হয়, যার ফল স্বরুপ মাছ চাষিরা জৈব পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যকর মাছের উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। জৈব-জুস, হলুদ, লবন, চুন , গোবর প্রভৃতি জৈব উপাদানে লাভজনক মাছ চাষের পথ দেখাচ্ছে হলদিয়া।
বিজ্ঞানীদের দল দ্বারিবেড়িয়া গ্রামের নারায়ন বর্মনের ফিশ-ফার্মে যান। সেখানে মাছ চাষিদের চাষের অভিজ্ঞতা সহ মত বিনিময় করছেন। এর পর তপন বর্মন, পঞ্চানন মন্ত্রী, মৃন্ময় সামন্ত, সুদীপ বিকাশ খাটুয়া, সফি আহমেদ, আরতী বর্মন প্রভৃতি প্রগতিশীল মাছ চাষিদের মাছের খামার গুলি পরিদর্শন করেন। হলদিয়ায় যে ছয় জন মাছ চাষি রাজ্য ও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তাদের মাছের খামারগুলিও পরদর্শন করেন বিজ্ঞানীরা।
মিঠে জল মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আধুনিক মাছ চাষে জলজ ব্যবস্থার জীবনচক্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে টেকসই জলজ চাষ অর্থাৎ মাছ চাষের অনুশীলনগুলির বিকাশ এর এক উল্লেখযোগ্য গবেষনার কাজ করছেন। হলদিয়ার অভূতপূর্ব কর্মকান্ড এর খবরে দুই দিনের সফরে ছুটে এসেছেন তাঁরা।
সরাসরি বিজ্ঞানিকদের সাথে মত বিনিময়ে করতে পেরে হলদিয়ার মাছ চাষিরাও অত্যন্ত খুশি। বিশ্ব-উষ্ণায়ন ঋতু পরিবর্তনের এই সময় জলাশয়ের সদ্বাব্যাবহার করে পরিবেশ বান্ধব জৈব উপায়ে বৈচিত্রময় মাছের চাষ এর প্রতি হলদিয়ার মাছ চাষিদের এই আগ্রহ এক ইতি বাচক দৃষ্টিভঙ্গি, যা মাছচাষে হলদিয়া এক অনন্য পথ দেখাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
