দিঘা, পূর্ব মেদিনীপুর : সামূদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬১ দিন সমূদ্র ও নদীতে মাছ শিকারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞাকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়েই যথেচ্ছ হারে মাছ শিকার করছে একদল মৎস্যজীবী। নজরদারীর অভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছে মাছেদের জীবনচক্র। এই নিয়েই প্রতিবাদে সরব হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরাম। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাঁথির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টার ফিসারিজ (মেরিন)কে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।
পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি তমালতরু দাস মহাপাত্রের অভিযোগ, “প্রতিবছর ঘটা করে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেই ক্ষান্ত থাকেন প্রশাসনিক কর্তারা। কিন্তু তারপর নজরদারীর কোনও বালাই নেই। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই একদল অসাধু মৎস্যজীবী যথেচ্ছহারে মাছ শিকারে নেমে পড়েন”। তমালের দাবী, “কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লক, রামনগর ২, কাঁথি ১ ও হলদিয়ার সুতাহাটা ব্লক সহ একাধিক এলাকায় এভাবেই মাছ শিকার করছেন একদল মৎস্যজীবী”।
তমালের দাবী, “এরফলে যে সমস্ত মৎস্যজীবীরা মাছ শিকার থেকে বিরত আছেন তাঁরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়ছেন। এভাবে মৎস্য সম্পদ নষ্ট হতে থাকলে মরশুমের সময় নদী ও সমূদ্র ফাঁকা হয়ে যাবে। চূড়ান্ত ভাবে ভেঙে পড়বে মাছেদের জীব বৈচিত্র। প্রসঙ্গতঃ লকডাউন উঠে যাওয়ার পর গত মরশুমে চূড়ান্ত ইলিশের আকাল হতাশ করেছে মৎস্যজীবিদের। অন্যান্য সামূদ্রিক মাছও তুলনায় খুব কম এসেছে। যার মূল কারণ, মৎস্য সংরক্ষণের অভাব। তারপরেও প্রশাসনের নজরদারীর ঢিলেমিতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ মৎস্যজীবী সংগঠন।
কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী ইউনিয়ানের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত খুঁটিয়ার দাবী, “মাছ ধরায় বিধিনিষেধা থাকা কালীন যে সমস্ত মৎস্যজীবী আইন ভাঙছেন তাঁদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করত হবে এবং মাছ ধরা বন্ধ থাকা কালীন প্রত্যেক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবিদের সঞ্চয় ও ত্রাণ প্রকল্পে ৫ হাজার টাকা জীবিকা সহায়তা প্রদান করতে হবে।
অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টার অফ ফিসারিজ (মেরিন কন্টাই) সুরজিৎ বাগ জানান, “ব্যান পিরিয়ডে প্রায় ৯০ শতাংশ বোট সমূদ্রে নামা থেকে বিরত রয়েছে। তবে কিছু ভুটভুটি নৌকো আইন ভেঙে জলে নামার অভিযোগ উঠেছে। আমরা অভিযোগ পেয়েই লাগাতার অভিযান চালাচ্ছি। কোস্ট গার্ড, কোস্টাল পুলিশ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চলছে”।
সুরজিতের দাবী, “দিঘা থেকে খেজুরি বিস্তীর্ণ এলাকায় নজরদারীর মতো পর্যাপ্ত লোকবল নেই। তবুও আগে যেখানে বিপুল পরিমানে মৎস্যজীবী আইন ভেঙে জলে নামতেন এখন সেই সংখ্যা খুব নগন্য”। সুরজিতের দাবী, “গতকাল আধিকারীকরা রসুলপুরে ২টো নৌকোকে সতর্ক করেছে। আজ আমি নিজে যাব এলাকায়”। তবে সবার সহযোগিতা ও লাগাতার সচেতনতার প্রচারে অবৈধ মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই দাবী জানিয়েছেন তিনি।
মোবাইলে নিউজ আপডেটপেতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিন, ক্লিক করুন Whatsapp