পূর্ব মেদিনীপুর.ইন : CRZ (কোস্টাল রেগুলেটিং জোন) আইনের গেরোয় আটকে রয়েছে মৎস্যজীবিদের সরকারী আবাসন প্রকল্প। ফি বছর বন্যায় ভেসে যায় তাঁদের মাথার ছাদ। পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবি ফোরামের অভিযোগ, আইনের ফাঁক গলেই সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নির্বিচারে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক হোটেল। অথচ ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতেই মাথা গুঁজে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বহু মৎস্যজীবি পরিবারগুলি।
মৎস্যজীবিদের আবাস যোজনায় ঘর নির্মাণে জট কাটাতে সম্প্রতি প্রশাসনের দ্বারস্থ্য হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরাম। সংগঠনের অভিযোগ, CRZ-এর বিধিনিষেধ দেখিয়ে রামনগর-২ ব্লকের কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৫টি মৌজায় সরকারী আবাসন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এই নিয়ে প্রশাসনে বহু আবেদন নিবেদনেও কোনও কাজ হয়নি। এবারের ইয়স ঝড় ও সমূদ্রের জল প্লাবিত হয়ে এখানকার প্রায় ৫০০ বাড়ি চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঝড়ের দাপটে মাছ ধরার জাল-নৌকো, মাছ চাষের পুকুর, চাষের ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সহ জীবিকা ও বাসস্থান হারিয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু প্রশাসনের দাবী, CRZ আইনে বলা হয়েছে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নির্মাণ করা যাবে না। এই কারনেই সমুদ্র তীরবর্তী দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর, শিলামপুর, মান্দারমণি, দাদনপাত্রবাড়, সোনামুই গ্রামের দরিদ্র মৎস্যজীবিরা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারী আবাসন প্রকল্প থেকে।
পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিষ শ্যামলের দাবী, “CRZ আইনে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় যে কোনও রকম নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মৎস্যজীবিদের আবাস নির্মাণে কোনও বাধা নেই। কিন্তু স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় এই আইনের গেরোয় দরিদ্র মৎস্যজীবিরা সরকারী আবাসন প্রকল্পে গৃহ নির্মাণের অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তাঁর অভিযোগ, “অন্যদিকে মান্দারমণি সহ আশেপাশের এলাকাগুলিতে প্রতিনিয়ত গজিয়ে উঠছে একের পর এক সুদৃশ্য হোটেল। কখনও সখনও অভিযোগ পেয়ে প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অবৈধ হোটেলের নির্মাণ চলছে রমরমিয়ে”।
দেবাশিষের দাবী, “প্রতি বছর বেশ কয়েকবার সমূদ্রের জল ঢুকে গরীব মৎস্যজীবিদের বিপাকে পড়তে হয়। প্রায়শই তাঁদের কাঁচাবাড়িগুলি নষ্ট হয়ে যায়। তার সঙ্গে প্রতি বছর আইলা, উম-পুন, ইয়স-এর মতো ঝড় আছড়ে পড়ছে সমুদ্র উপকুলবর্তী এলাকায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না মৎস্যজীবিদের দাবী পূরণ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের তরফে দাবী জানানো হয়েছে।