তমলুক (পূর্ব মেদিনীপুর) : গত ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারী পূর্ব মেদিনীপুরের চন্ডীপুরের দলীয় জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় আচমকাই মঞ্চে উঠে তৎকালীন তৃণমূলের যুব নেতা অভিষেক ব্যানার্জীকে চড় কষিয়ে দিয়েছিল তমলুকের যুবক দেবাশিষ আচার্য নামের এক যুবক। আজ সেই দেবাশিষের মৃত্যু হয়েছে রহস্যজনক ভাবে।
সূত্রের খবর, আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪.১৫টা অজ্ঞাত কেউ মৃতপ্রায় দেবাশিষকে জেলা সদর তমলুক হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যায়। কিছু সময় বাদেই মৃত্যু হয় তাঁর। বিকেল নাগাদ তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরে হাসপাতালে পড়ে রয়েছে দেবাশিষের মৃতদেহ। এরপরেই শোরগোল পড়ে যায় গোটা এলাকায়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসে দেবাশিষের পরিবার।
সেই সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে আসেন তমলুক থানার অফিসার ইনচার্জ, মহকুমা পুলিশ আধিকারীক সহ একাধিক প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। ঠিক কি ঘটল তা এখনও কেউ আঁচ করতে পারেননি। কে বা কারা দেবাশিষকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গেল, তার সঙ্গে ঠিক কি ঘটেছিল তা এখনও পরিষ্কার নয়। দেবাশিষের পরিবারের পাশাপাশি গোটা ঘটনা নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ প্রশাসনও।
সূত্রের খবর, যেদিন অভিষেককে চড় মারার পরেই দেবাশিষকে মঞ্চের ওপর বেধড়ক মারধর করেছিল তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় দেবাশিষকে উদ্ধার করে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অভিষেকের সঙ্গে দেবাশিষের পরিবার দেখা করে ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলে আহত দেবাশিষের সমস্ত চিকিৎসা খরচ বহন করেন খোদ অভিষেকই।
পরবর্তীকালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর দেবাশিষ সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে এরপর দফায় দফায় দেবাশিষকে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই। সুস্থ হয়ে দেবাশিষ জানিয়েছিল, সে আরএসএস এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই অভিষেককে চড় কষিয়েছিল। পরে সে ঘটনার জন্য অনুতপ্ত বলে জানিয়েছিল। কিন্তু কিভাবে আজ তাঁর মৃত্যু হল তা নিয়ে হতভম্ব সকলেই। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মৃত দেবাশিষের বন্ধূ সঞ্জয় দেবনাথ জানান, “গতকাল রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ দেবাশিস একটি মোটর বাইক নিয়ে ৪১নং জাতীয় সড়কের নেতাজীনগরের কাছে একটি চায়ের দোকানে যাবে বলে জানায়। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েই আমি ও শুভঙ্কর ঘোষ আরও একটি মোটর বাইক নিয়ে রওনা দেই। তিনজনে একসঙ্গে নেতাজীনগরের চায়ের দোকানে গিয়ে আড্ডা দেওয়ার সময় আচমকাই দেবাশিষ ফোনে কথা বলতে বলতেই বাইক নিয়ে কারও সঙ্গে দেখা করবে বলে চলে যায়। এরপর থেকে দেবাশিষের সঙ্গে ফোনে আর যোগাযোগ করা যায়নি”।
সঞ্জয় আরও জানান, “এরপর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও দেবাশিষ না আসায় আমরা ফিরে আসি। সকালে দেবাশিষের মা ফোন করে জানান, রাতে সে বাড়ি ফেরেনি। এরপরেই তাঁর খোঁজ করতে করতেই বিকেল নাগাদ জানতে পারি দেবাশিষ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় রয়েছে। কি ভাবে তাঁর মৃত্যু হল তা জানার জন্য সকলেই উদগ্রীব হয়ে রয়েছি”, জানিয়েছে সঞ্জয়।
তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারীক অতীশ বিশ্বাস জানান, “গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃত দেহটিকে ময়না তদন্তে পাঠিয়েছি। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরের দিকে ওই যুবককে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি করে দিয়েগেছে। এরপর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে তবেই কি ঘটেছিল তা জানানো সম্ভব হবে” বলে জানিয়েছেন তিনি।