হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর : বাঙালীর কাছে যেমন দুর্গাপুজো ঠিক তেমনই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের মানুষের কাছে বিশ্বকর্মা’র আরাধনা। রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্প শহরের বিশ্বকর্মা পুজোর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে আছে দূরদূরান্ত পর্যন্ত। তবে একটানা লকডাউন আর কোভিড মহামারির জেরে সেই শিল্পাঞ্চলই এখন অর্থের অভাবে ধুঁকছে। মন্দার ছাপ এসে পড়েছে সর্বত্র। করোনা বিধিনিষেধ আর মন্দার জোড়া ফলায় তাই এবার শিল্পের দেবতার আরাধনা জৌলুসহীন হয়ে পড়েছে হলদিয়ায়।
নানান থিমের মন্ডপের ভীড় এবার আর দেখা যাবে না রাজ্যের জনপ্রিয় এই শিল্প শহরে। বিধিনিষেধের কড়াকড়ির সঙ্গে আর্থিক মন্দার জেরে শিল্পাঞ্চলের পুজো কমিটিগুলি এবার ম্রিয়মান। যে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের পুজো দেখতে দূর দূরান্ত থেকে লক্ষাধিক মানুষেরা ভীড় করতেন এবার আর সেই চিত্র দেখা যাবে না বলেই দাবী করছেন শিল্পাঞ্চল এলাকার পুজো উদ্যোক্তারা।
হলদিয়ার রিফাইনারী কনট্রাকটর ওয়ার্কার সুপারভাইজার অ্যাসোসিয়েশানের পুজো কমিটির তরফে তাপস বেরা যেমন জানিয়েছে, “এবার তাঁদের পুজো ২৫ বছরে পড়েছে। কিন্তু এবারই মন্ডপ অত্যন্ত ছোট্ট করে ক্যান্টিনের কাছে করা হয়েছে। অথচ প্রতিবছর এই বিশ্বকর্মা পুজোকে কেন্দ্র করে নানান সামাজিক কর্মকান্ড চলে। পুজোর মন্ডপও থাকে নজরকাড়া। কয়েকটা দিন টানা বড়সড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু এবার সব বন্ধ। খুব ছোট্ট করে জৌলুসহীন মন্ডপ তৈরি হয়েছে এবার। আগত দর্শকদের মনোরঞ্জনের কোনও আয়োজনই থাকছে না এবার।
হলদিয়া বন্দর এলাকার পুজো উদ্যোক্তাদের পক্ষে আব্দুল ওয়াহিদ জানান, “করোনা অতিমারির জেরে বন্দরে জাহাজ আনাগোনায় প্রভাব পড়েছে বিস্তর। দৈনিক মজুরিতে কাজ করা বা ঠিকা ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের দূরবস্থা চরমে। এই পরিস্থিতিতে জাঁকজমক করে পুজো অসম্ভব। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রশাসনের কড়াকড়িও। তাই কোনও মতে ছোট্ট মন্ডপ বানিয়েই এবার পুজো হচ্ছে। কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবার হচ্ছে না” বলেও আয়োজকরা জানিয়েছেন।
একই অবস্থা গোটা শিল্পাঞ্চলের। মন্ডপ শিল্পী রঘুনাথ জানা জানিয়েছেন, হলদিয়ার বিশ্বকর্মা পুজোর একাধিক মন্ডপসজ্জার বুকিং আসত বেশ কয়েকমাস আগে থেকে। আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম তৈরি করা হত প্রায় ৬ মাস আগে থেকে। বহু শিল্পী ও তাঁদের পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। কিন্তু এবার একটি ছোট্ট একটি মন্ডপ ছাড়া কাজের কোনও বরাত আসেনি। এর জেরে বহু পরিবার কাজ হারাল এবার।
হলদিয়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারীক পার্থ ঘোষ জানান, এবার কোনও পুজো কমিটি থেকেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আবেদন আসেনি। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভীড় ভাট্টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। এর জন্য অধিকাংশ পুজো কমিটিগুলি নিজেরাই প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা ছোট মন্ডপ করবেন। সবাইকেই কোভিড বিধি মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কেউ যদি করোনা বিধি অমান্য করেন তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অতিমারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হলদিয়া শিল্পাঞ্চল তথা তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি (আইএনটিটিইউসি) তাপস মাইতি জানান, এবার বিশ্বকর্মা পুজো একেবারেই ছোট্ট আকারে হচ্ছে। সমস্ত পুজো কমিটিগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জোর করে চাঁদা আদায় করা যাবে না। সেই সঙ্গে পুজোর আয়ব্যয় সংক্রান্ত শ্বেতপত্র সবাইকেই পুজো মন্ডপের পাশে ঝোলাতে বলা হয়েছে। অরিমারির সময় বড়সড় কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা, বা অতিরিক্ত ভীড় যাতে না হয় সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।