নন্দীগ্রাম : আদি-নব্য সংঘাতে নন্দীগ্রামের একঝাঁক বিজেপি নেতা দল ছাড়তেই ফেসবুকে জেলা নেতৃত্বকে তুলোধনা করছেন বিজেপির পদাধিকারীরা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির মধ্যে তুমুল আকচাআকচি শুরু হয়েছে। জেলা নেতৃত্বকে অযোগ্য বলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন জেলার বিজেপি নেতা-কর্মীরা। মর্মাহত বিজেপির সাধারণ কর্মী সমর্থকরাও।
সভাপতি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সংঘাতে ২২ অক্টোবর পাঁশকুড়ায় একসঙ্গে চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে রাজ্য নেতৃত্ব৷ ওই তালিকায় গত বিধানসভা ভোটের প্রার্থীও আছেন। তারপরই নন্দীগ্রামের একঝাঁক নেতা দল ছাড়ায় দলের একটা বড় অংশের রোষের মুখে পড়েছেন জেলা নেতৃত্ব। বিশেষ করে নন্দীগ্রামে নব্য বিজেপি নেতারা যেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছেন, তাতে আদি শিবিরের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে এসেছে বলে তাঁরা মনে করছেন। এনিয়ে পার্টিতে বিভাজন প্রকট হচ্ছে।
বিজেপির নন্দীগ্রাম-১ দক্ষিণ সম্পাদক শিবশঙ্কর সাউ বলেন, মেঘনাদ পাল এবং অশোক করণ নন্দীগ্রাম বিজেপির মুখ। তৃণমূল করার সময় তাঁদের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীদের উপর অত্যাচার হয়েছে। আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরিতে বাধা দেওয়া, হয়েছে৷ পতাকা টাঙানোর অপরাধে মারধর করা হয়েছে। পঞ্চায়েতে সীমাহীন অনিয়ম হয়েছে। বিধা ভোটের প্রাক্কালে দাদার পিছু নিয়ে বিজেপিতে এসে তাঁরাই এখন বিজেপির মুখ। এটা আমাদের মতো পুরনো দিনের বিজেপি কর্মীদের পক্ষে মেনে নেওয়া শক্ত। দল এই বিষয়টি কিছুতেই বুঝতে চাইছে না।
বিজেপির ময়না দক্ষিণ মণ্ডল কমিটির সদস্য কমল সাঁতরা তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘বিজেপি তমলুক সাংগঠনিক জেলার যা অবস্থা তাতে কাজ করে পদ পাওয়া যায় না। জেলা সভাপতি এবং রাজ্য সম্পাদকের পা চাটলেই পদ পাওয়া যায়। এরকম চলতে থাকলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবি অবশ্যম্ভাবী৷’ সুশান্ত ভৌমিক নামে এক নেতা লিখেছেন, ‘বিজেপি এখন সেলফি পার্টি হয়ে গিয়েছে।’ ময়না দক্ষিণ মণ্ডলের অন্তর্গত শক্তিকেন্দ্রের প্রমুখ বাবলু মণ্ডল বলেন, ‘পার্টির নামে এখন সার্কাস চলছে। একবছর হল, ময়নায় মণ্ডল সভাপতি ঘোষণা করতে পারেনি দল।’
দলত্যাগীদের মধ্যে অন্যতম বটকৃষ্ণ দাস৷ তিনি গত বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের বিজেপির ভাঙন নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বকে তুলোধনা করে বলেন, জেলা নেতৃত্বকে আমাদের সমস্যার কথা জানানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু, জেলা সভাপতি তাতে কর্ণপাত করেননি। বারবার নন্দীগ্রামের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। যে কারণে পার্টি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।
বিশেষ সূত্রে খবর, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নন্দীগ্রামের আদি বিজেপির একঝাঁক নেতা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। মঙ্গলবার তাঁরা দলত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছেন। তারপর তমলুকে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁরাই নন্দীগ্রামে তৃণমূলের তুরুপের তাস।
দলত্যাগীদের মধ্যে প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি জয়দেব দাস কনভেনার ছিলেন। ভোটের সময় বিরোধী দলনেতার অন্যতম সেনাপতিও দলত্যাগ করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, নন্দীগ্রামের মাটিতে বিজেপি কর্মীরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন। স্থানীয় বিধায়ক যদি কোনওদিন সাহস নিয়ে আবার নন্দীগ্রামে দাঁড়ান, সেদিন আমরা দায়িত্ব নিয়ে হারাব। আর কোনওদিন নন্দীগ্রাম থেকে জিততে পারবেন না।
জেলা বিজেপি সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নন্দীগ্রামের বিষয়টি দলের রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। তাঁদের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ এই ঘটনা পঞ্চায়েত ওয়া হবে। এই ভোটে কোনও প্রভাব ফেলবে না। নন্দীগ্রামেও দলের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না।