মহিষাদল : ফেলে দেওয়া আবর্জনা আর বর্জ্য পদার্থকে কাজে লাগিয়ে জৈব সার তৈরিতে নজির গড়ছে মহিষাদল থানার ইটামগরা ২ গ্রাম পঞ্চায়েত। বর্জ্যকে সম্পদে বদলে ফেলে আয়ের পথ দেখছেন এলাকার মহিলারাও। শহরের মতো হুইসেল বাজিয়ে বর্জ্য সংগ্রহে গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন তাঁরা। বর্জ্য এনে তৈরি করছেন সার। জৈব সারের ম্যাজিকে এখন এলাকায় পান ও সব্জির ফলন বেড়েছে দ্বিগুণ।
বর্জ্য থেকে জৈব সার এবং প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করছে মহিষাদলের পঞ্চায়েতগুলি। বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে মিটছে চাষিদের জৈব সারের চাহিদা, কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে গ্রামে। বাড়ি থেকে বাজার সর্বত্র আবর্জনামুক্ত রাখার নতুন অভ্যেস তৈরি করতে নজরদারি টিম গড়েছে পঞ্চায়েত।
মহিষাদলের ইটামগরা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে আট বছর আগে শুরু হয় গ্রামীণ এলাকার কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। গৃহস্থের বাড়ি থেকে সব্জির খোসা, প্লাস্টিক আবর্জনা, বাজার এলাকার বর্জ্য এনে তাকে প্রক্রিয়াকরণ করতে শুরু করে পঞ্চায়েত। দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের৷ বর্জ্য পৃথকীকরণ করে আলাদা করা হয় পচনশীল বস্তু ও প্লাস্টিক।
পচনশীল নানা ধরনের বস্তুকে বিভিন্ন পিটের মধ্যে ফেলে ব্যাকটিরিয়া প্রয়োগ করে শুরু হয় জৈব সার তৈরি৷ প্লাস্টিক বর্জ্যকে ক্রাশারের মধ্যে ফেলে কুচিয়ে রিসাইক্লিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এখানকার ভার্মিকম্পোসড সার বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে গুণমান যাচাই করে লেভেল লাগিয়ে বিক্রি শুরু হয়।
দুটি বড় বাজার এবং পাঁচটি গ্রামের দেড় হাজারের বেশি বাড়ির আবর্জনা সংগ্রহ হচ্ছে এখন। ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে এলাকা। কাপাসএড়িয়া সংলগ্ন বামুনিয়াতে ৪১নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ২০ লক্ষ টাকা খরচে তৈরি এই বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প শুধু জেলা নয়, রাজ্যের মডেল হয়ে ওঠে।
ইটামগরায় সাফল্যের পর মহিষাদলের ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় ব্লক প্রশাসন। নির্মল বাংলা মিশনে প্রতি পঞ্চায়েতে ৩০ লক্ষ টাকা খরচে বর্জ্য প্রকল্প গড়ার কাজ শুরু হয়। শহরের আদলে ইতিমধ্যেই মহিষাদলের প্রায় প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতেই তৈরি হয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।
মহিষাদলের বিডিও যোগেশচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বর্জ্য থেকে সার তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। এক একটি প্রকল্প থেকে গড়ে ৩০০কেজি জৈব সার তৈরি হচ্ছে। ইটামগরা ২, লক্ষ্যা ২, গড়কমলপুরের মতো কয়েকটি ইউনিট আরও বেশি জৈব সার তৈরি করে।
ইটামগরা ২ ভার্মিকম্পোসড সারে সুনাম কুড়িয়েছে। ব্লকের বাইরেও বিক্রি হচ্ছে সার। এক একটি ইউনিট মাসে গড়ে সার বিক্রি ও প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় করে। সারা ব্লকে পঞ্চায়েতগুলি সবমিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার সার বিক্রি করে। এর লক্ষ্যমাত্রা আরও কয়েকগুণ বাড়ানোর জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্লকের নাটশাল ২ ও বেতকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতে উপযুক্ত জমির অভাবে প্রকল্প থমকে রয়েছে। সতীশ সামন্ত(গোপালপুর) গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণ মণ্ডল বলেন, বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করে গ্রামে আয়ের পথ দেখছেন মহিলারা। সকাল হলেই হুইসেল বাজিয়ে রিক্সাভ্যান নিয়ে হাজির হয় বর্জ্য সংগ্রহের গাড়ি। মহিলারা এই প্রকল্প থেকে মাসে গড়ে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করেন। গ্রামে পান বরোজ ও সব্জি চাষে বর্জ্য থেকে তৈরি জৈব সার ও ভার্মিকম্পোসডের দারুণ চাহিদা তৈরি হয়েছে। কেশবপুর বাজারের সভাপতি দীপক সামন্ত বলেন, এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে বাজার এলাকা অনেক পরিচ্ছন্ন থাকে। আবর্জনা থেকে রোগ ছড়ানোও অনেক কমেছে৷ ব্লকের ১৮-২০টি বাজার এই প্রকল্পের ফলে পরিচ্ছন্ন থাকছে।
তথ্যসূত্র-বর্তমান পত্রিকা