ঝাড়গ্রাম : রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নাই। ভুরি ভুরি টাকার সারি নাকি আবর্তিত হয় রাজনীতির আঙিনায়। আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতোই রাজনীতিতে এসেই কয়েক বছরে বৈভবের শিখরে চলে এসেছেন এমন নজির রয়েছে বিস্তর। এহেন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে টিপ্পনির মাঝেই সততায় নজির গড়ে চলেচেন ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুবোধ টুডু।
হল। জনপ্রতিনিধি হয়েও যে রাস্তার ধারে চা বিক্রি করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন সুবোধ টুডু৷ শুধু চা-বিস্কুট বিক্রি করেই এলাকায় জনপ্রিয় সুবোধ৷ পাশাপাশি তিনি আবার ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতিও। তবে তিনি সংসার চালান চা বিক্রি করেই। যদিও তার জন্য মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার কাজ তিনি বন্ধ করেননি। চা তৈরি করতে করতেই তিনি মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন।
চা তৈরির মাঝেই বিভিন্ন সার্টিফিকেট লিখে দেন গ্রামের সাধারণ মানুষকে। এর ফলে ছুটির দিনও পরিষেবা পান সাধারণ মানুষ। চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সুবোধবাবুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, চা বিক্রি করা আমার পেশা। বহু বছর ধরেই এই দোকান চলে আসছে। বিকেলে চা খেতে গ্রামের মানুষ ভিড় জমান। সেই সময় তাঁরা নিজেদের সমস্যা তুলে ধরেন। সেইগুলি সমাধানের চেষ্টা করি। রাজনীতি করা মানে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। চা বিক্রির সঙ্গে নিষ্ঠা সহকারে সেই কাজ করে যাই।
প্রসঙ্গত, সুবোধবাবুর বাড়ি ঝাড়গ্রাম ব্লকের সাপধরা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজপাড়া এলাকায়। তাঁর বাবা চাষের কাজ করতেন। তিনি স্নাতকস্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অভাবের তাড়নায় সুবোধবাবু চায়ের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন। বাম আমলে পড়াশোনা করেও চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রণা তিনি এখনও ভুলতে পারেন না। কিন্তু তিনি হার মানেননি। বরং চায়ের দোকান করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে গিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই তিনি ঝাড়খণ্ড পার্টিতে যোগ দেন। বাম নেতাদের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করেই তিনি দলের কাজ করতেন। সংসারে অভাব থাকলেও নিষ্ঠা সহকারে গ্রামের মানুষের অভাব অভিযোগ তুলে ধরতেন। ২০০৬ সাল নাগাদ তিনি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সদস্য হন। সেই সময় মাওবাদী আন্দোলনের ঝাঁজ বেড়ে যাওয়ায় বহুবার সমস্যায় পড়তে হয় সুবোধবাবুকে। তবে পালা বদলের পর ছবিটা বদলাতে শুরু করে। সুবোধবাবু তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৩ সালে তিনি সাপধরা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন।
স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য তাঁকে পঞ্চায়েতের শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য স্থায়ী সমিতির সঞ্চালক পদে বসানো হয়। তিনি এলাকায় সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। ২০১৪ সালে সাপধরা অঞ্চল সভাপতি হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালে তিনি ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। সেই সময় থেকে দল ও সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর কদর বাড়লেও তিনি নিজের পেশাকে কখনও ভুলে যাননি। এখনও সকাল ও সন্ধ্যায় তিনি চা বিক্রি করেন।
ওই এলাকার শাসকদলের এক নেতা বলেন, সুবোধবাবুর মতো মানুষ আছে বলেই রাজনীতিকে মানুষ আজও শ্রদ্ধা করেন। তিনি জন প্রতিনিধি হলেও নিজের পেশাকে ভুলে যাননি। চায়ের দোকানে চা খেতে এসেছিলেন পুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা তরুণ মাহাত৷ তিনি বলেন, যে কোনও সমস্যায় পড়লে সুবোধবাবু পাশে থাকেন। চায়ের দোকানে এলেও পরিষেবা মেলে। আজকের দিনে এমন মাটির মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।