ময়না : হালকা শীতের ভোর। কুয়াশা ঘেরা গ্রামের ফাঁকা রাস্তা। কেউ কোথাও নেই। ভোরের নৈশব্দ ভেঙে দিচ্ছে শিশুর কান্না! আওয়াজ শুনে প্রথমটা চমকে গিয়েছিলেন প্রাতঃভ্রমণকারীরা। এমন সময় এখানে শিশুর কান্না কেন? একটু এগিয়ে তাঁরা দেখেন, আলুথালু এক শিশু রাস্তায় বসে। কান্নাকাটি করছে অসহায়ের মতো। চার বছরের আশপাশে বয়স। কাঁদতে কাঁদতে দম আটকে যাচ্ছে তার। কাঁদছে সেই রাত আড়াইটে থেকে। বাবা-মায়ের তুমুল ঝগড়ার খেসারত দিচ্ছে একরত্তি।
সোমবার সকালে এমন অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল ময়না থানার তিলখোজা গ্রাম। রবিবার রাতে স্বামীর সঙ্গে ব্যাপক অশান্তি হয় স্ত্রীর। শিশুটিকে কোলে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন মা। তখন গভীর রাত। গ্রামের পাশেই নদী। ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন ওই বধূ। শিশুটিকে রাস্তায় বসিয়ে নদীপাড়ের দিকে এগিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যুভয় ঘিরে ধরে তাঁকে। ঝাঁপ আর দেওয়া হয়নি।
পরিবর্তে শিশুটিকে সেখানে ফেলেই আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। সেই থেকে শিশুটি কাঁদছিল। প্রাতঃভ্রমণকারীরা তাকে দেখে খবর দেন থানায়। গ্রামের লোকেরাও চলে আসেন৷ পুলিস এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে। তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কয়েক ঘণ্টা বাদে পাঁশকুড়া থানার বিজয়নগর গ্রাম থেকে সঞ্জীব ঘোড়াই নামে এক ব্যক্তি থানায় হাজির হন। তিনি নিজেকে শিশুটির জেঠু বলে পরিচয় দেন। পরে পুলিশি তৎপরতায় মায়ের খোঁজ মেলে৷ বুঝিয়ে সুজিয়ে মায়ের কোলে সন্তান তুলে দেয় পুলিশ।
জানা গিয়েছে, ১২ বছর আগে ময়না থানার মাসমচক গ্রামের মামনি বেরার সঙ্গে পাঁশকুড়ার বিজয়নগর গ্রামের বাসিন্দা সুদীপ ঘোড়াইয়ের বিয়ে হয়। তাঁদের ১০ বছর ও চার বছরের দু’টি ছেলে রয়েছে। দম্পতির মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত। রবিবার রাতেও ঝামেলায় জড়ান স্বামী-স্ত্রী। ছোট ছেলেকে কোলে তুলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন মামনি। বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোথাও মা-ছেলের সন্ধান পাননি৷ জানা যায়, তিলখোঁজার কাছে ওই রাস্তায় শিশুটিকে ফেলেতিনি চলেযান আড়ংকিয়ারানা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে।