তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর : অবৈধ বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে বহু নিরীহ মানুষের। তারপরেও হুঁশ ফেরেনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অবৈধ বাজি কারবারিদের। চোরাই পথে বছরভর দেদার বাজির মশলা জেলায় (Purba Medinipur) ঢুকলেও তাদের টিকির নাগাল পায়নি জেলা পুলিশ। আর তারই ফলশ্রুতিতে ব্যপক রমরমা কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন এই অবৈধ বাজি কারবারিরা। যার প্রমাণ মিলল সাম্প্রতিক একের পর এক পুলিশি অভিযানের মধ্যে দিয়ে।
গত কয়েকদিন ধরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের অভিযানের জেরে একের পর এক বিশাল পরিমানে বাজির ভান্ডার বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে খবর। উদ্ধার হওয়া এই বাজির বাজারদর লক্ষাধিক টাকা বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এমন ঘটনায় বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই অবৈধ বাজির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গতকাল তমলুক মহকুমা পুলিশ আধিকারীক সাকিব আহমেদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে কোলাঘাট থানার প্রয়াগ গ্রামে একটি দোকান থেকে প্রায় সাত কুইন্টাল নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একই ভাবে কাঁথি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা’র নেতৃত্বে খেজুরি থানার বাঁশগোড়া বাজারে অভিযান চালিয়ে দুটি দোকান থেকে প্রায় সাড়ে সাত কুইন্টাল নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় ২ মজুদকারী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
একই ভাবে নন্দকুমার থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সৌরভ চিন্নার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে নন্দকুমার থানার খঞ্চি গ্রামে একটি বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কুইন্টাল নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয় ও গ্রেপ্তার করা হয় মজুদকারী ব্যক্তিকে। তার আগে কোলাঘাট থানার আন্দুলিয়া গ্রামে একটি বাড়ি থেকে প্রায় ষোলো কুইন্টাল নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয় ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক জন ব্যক্তিকে। এরই পাশাপাশি পুলিশের আবেদন, জেলার কোনও জায়গায় এরকম কোনো অবৈধ বাজি কারবারিদের কার্যকলাপের খবর নজরে এলে যেন দ্রুত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নিরাপত্তা সহ দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্যই ক্রমাগত এই প্রয়াস চলছে বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছেন।
তবে সূত্রের খবর, একদিকে যেমন পুলিশের ধরপাকড় চলছে তেমনি অন্যপ্রান্তে কিন্তু প্রশাসনের একাংশের মদতেই জেলা জুড়ে বেপরোয়া ভাবে চলছে অবৈধ বাজির কারবার চলছে বলে অভিজগ রয়েছে বিস্তর। যেখানে ফি বছর দুর্ঘটনা লেগেই থাকে, মৃত্যুও হয় বহু নিরীহ মানুষের। এদের মধ্যে বহু চর্চিত এবছরের ১৬ মে এগরায় খাদিকুল গ্রামে ভানু বাগের অবৈধ কারখানায় বিস্ফোরণে ভানু সহ আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গত বছরের শেষ দিকে একই ভাবে ভগবানপুর-২ ব্লকের ভূপতিনগর থানার অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাড়য়াবিলা গ্রামেও বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয় এক তৃণমূল নেতা-সহ তিন জনের। তার আগে খেজুরির পশ্চিম ভাঙনমারি গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়। সেখানেও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় এনআইএ তদন্তে নেমে তৃণমূল নেতা সহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তারপরেও বেপরোয়া বাজি কারখানায় যে রাশ টানা যায়নি সাম্রতিক বাজি উদ্ধারের ঘটনা সেই কথাই প্রমাণ করে।